ক্লিক প্ল্যাটফর্মের নতুন সিরিজে গোয়েন্দা সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্দার ডাকসাইটের গোয়েন্দা বাস্তবে ঠিক কেমন, কাজ-সম্পর্ক নিয়ে অকপট অভিনেত্রী-গায়িকা। শুনলেন শ্যামশ্রী সাহা


শহরে নতুন গোয়েন্দা আপনি, আপনার পছন্দের মহিলা গোয়েন্দা কে?

‘মিতিন মাসি’, ‘মিস মার্পল’, ‘এনোলা হোমস’। বাংলা সাহিত্যের হয়তো আরও মহিলা গোয়েন্দা আছেন, কিন্তু ফেলুদা, ব্যোমকেশের মতো কেউ জনপ্রিয় নন।

কেন বলুন তো?

ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গা থেকে বলতে গেলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। মহিলা, পুরুষ বা ট্রান্স গোয়েন্দা হতেই পারেন, কিন্তু জনপ্রিয়তার নিরিখে মহিলাদের তুলনায় পুরুষ গোয়েন্দারাই এগিয়ে। মিতিন মাসি কিছুটা ব্যতিক্রম। প্রফেশনে আলাদা করে মহিলা শব্দটা যোগ করা হয়, আমি এই বিভাজনেই বিশ্বাস করি না। এখনও কোথাও একটা ডিসক্রিপেন্সি রয়ে গিয়েছে। তাই এই চরিত্রটা করতে চেয়েছিলাম। এই ব্যরিয়ারটা ভাঙার জন্য এটা আমার বেবি-স্টেপও বলতে পারেন।

আপনি যাঁদের কথা বললেন, সেখানে বই থেকে সিনেমা হয়েছে ‘ডিটেকটিভ চারুলতা’র গল্প সিরিজের কথা ভেবে লেখা, এই ধরনের চরিত্র করাটা কি কঠিন?

সৌমিতদা চরিত্রটার স্রষ্টা। প্রথমে নাম রাখা হয়েছিল ‘ফেলুদি’। পরে ‘ডিটেকটিভ চারুলতা’ নাম হয়। এটা কিছুটা সিরিজ, কিছুটা ফ্যান ফিকশন। এখানে তপু, সিধুদি আছেন। এই গল্পের অনুপ্রেরণা কিন্তু সত্যজিৎ বাবু। তাই কাজটা কঠিন মনে হয়নি। 


সিরিজে আপনাকে অ্যাকশনও করতে হয়েছে। প্রস্তুতি নিতে হয়েছে নিশ্চয়ই?

প্রথমে তো বেশ টেনশন হচ্ছিল, কারণ আগে তো অ্যাকশন করিনি। এই সিরিজের জন্য অ্যাকশন শিখতে হয়েছে। তার জন্য খুব কম সময় পেয়েছি। এতদিন পর্দায় অ্যাকশন দৃশ্য দেখেছি। নিজে করতে গিয়ে বুঝলাম ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। প্রাজ্ঞদা (দত্ত) প্রথমেই একটা কথা বলেছিলেন, “দৃশ্যগুলোকে মাসকুইলিন করার চেষ্টা কোরো না। তুমি একজন মহিলা হয়ে মারামারি করছ। সেভাবেই কাজটা কর।” এই কথাটা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। ক্ষমতা মানেই তো পুরুষ নয়, এটা একটা স্বতন্ত্র বিষয়। সেই ভাবনাটাকেই এই চরিত্রে কাজে লাগিয়েছি। 


আপনার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট কি ‘ওপেনটি বায়োস্কোপ’? 

জনপ্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে এটা ঠিক। এই ছবি আমাকে লাইমলাইটে এনেছে। আমি যখন অভিনয়ে এসেছিলাম, তখন জানতাম না অভিনয় কাকে বলে। কোনও প্রশিক্ষণ ছিল না। এই ছবিতে ঋদ্ধির সঙ্গে সম্পর্ক হওয়াটা আমার টার্নিং পয়েন্ট। ওঁর সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর বুঝতে পারলাম এই বিষয়ে পড়াশোনা করে নিজের অভিনয় দক্ষতা বাড়ানো যায়। তারপর ‘স্বপ্নসন্ধানী’তে যোগ দিই। কৌশিক সেন, রেশমী সেন-এর অবদানও অনেকটাই। থিয়েটার আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। সিনেমা আর থিয়েটার দুটো আলাদা মাধ্যম, কিন্তু এক সুতোয় বাঁধা।


আপনি তো খুব ভাল নাচতেন সেটা ছাড়লেন কেন?

নাচটা একটা সময়ে করতাম। তখন ভাল লাগত। পরে মনে হয়েছিল গান আর অভিনয়ই আমার এগিয়ে যাওয়ার পথ। এর মাঝে আমার হার্টে একটা মাইক্রোসার্জারি হয়। তখন নাচটাও বন্ধ হয়ে যায়। সুস্থ হওয়ার পর নাচে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছেটা আর হয়নি। 


বাস্তবে কোনও প্রাইভেট ডিটেকটিভ দেখেছেন?

না। তবে ঋদ্ধিকে দেখেছি। ওর মারাত্মক পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। খুব সহজেই কোনও বিষয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়, যেটা আমার হয়তো পাঁচদিন সময় লাগত।

সুরঙ্গনা কি ‘ডিটেকটিভ চারুলতা’র মতো সাহসী, প্রতিবাদী?

ততটা নই। তবে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে মনে হয় আর একটু গলা ফাটানো উচিত।

ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত কেউ ছিলেন না। সমস্যায় পড়েছেন? ইনসিকিওর মনে হয়েছে?

বাড়িতে গানবাজনার চর্চা ছিল। কিন্তু সেটা কারওর পেশা ছিল না। সবাই চাকরিজীবী। সিকিওর লাইফ। অভিনয় জগতে আসার পর বুঝতে পেরেছিলাম, এই পেশায় কিছুই সিকিওর নয়, আজ কাজ আছে, কাল নাও থাকতে পারে। সেটা জেনেই এই পেশায় এসেছি। ইন্ডাস্ট্রির অনেক সমস্যার কথা শুনেছি, অনেকেই সেই সব সমস্যায় পড়েছেন, কিন্তু আমার ভাগ্য ভাল সেরকম কোনও পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। ভালবাসা, সম্মান পেয়েছি। 

‘বল্লভপুরের রূপকথা’র পর ছবির কাজ না থাকায় সিরিজে ফিরলেন? 

দেখুন, আমার কাজ অভিনয় করা। যেখানে ভাল সুযোগ পাব কাজ করব। আর একটা বিষয় আমি অতটাও প্রিভিলেজড নই যে বড়পর্দা ছাড়া কাজ করব না, এরকমটা ভাবতে পারি। আমার কাছে এত কাজ আসে না, যে খুব বাছাই করে কাজ করব। বড়পর্দার প্রতি ভালবাসা আছে হ্যাংলামি নেই। 

কাজ নেওয়ার আগে স্ক্রিপ্ট নিয়ে ঋদ্ধির সঙ্গে আলোচনা করেন?

আমরা সারাক্ষণই নানা বিষয়ে কথা বলি। যদি কোনও ইন্টারেস্টিং কাজ আসে তখন সেটা নিয়ে কথা বলি। কাজটা করব কি করব না, সেটা নিয়ে কথা বলিনি কখনও।

আপনাকে আর ঋদ্ধিকে পর্দায় একসঙ্গে কবে দেখা যাবে?

একটা কাজ হওয়ার কথা। ফাইনাল হয়নি। তাই এখনই কিছু বলতে পারছি না। 

নিউইয়র্কে আপনাদের চুম্বনের ছবি সাড়া ফেলেছিল, ট্রোলিংও হয়েছে। খারাপ লেগেছিল? 

সবাই জানে আমি আর ঋদ্ধি দশ বছর ধরে একসঙ্গে আছি। একটা ছবি তুলেছি তাতে এত সাড়া কেন ফেলল, সেটাই বুঝতে পারিনি। কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করেছেন দেখেছি। কী বলব! পুরো পৃথিবীটাই তো একটা গোঁড়ামির দিকে যাচ্ছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। রাস্তায় কাউকে চড় মারলে অসুবিধা হয় না, প্রকাশ্যে এত খারাপ ঘটনা ঘটছে, চুমু খেলেই দোষ! অশ্লীল তো কিছু নয়, দুটো মানুষ একটা চুমু খাচ্ছে তাতে এত অসুবিধার কী আছে?

আপনি কি বিয়েতে বিশ্বাসী?

আমাদের সম্পর্কটা এখন যেরকম আছে বিয়ে করলেও থাকবে, না করলেও থাকবে। আলাদা করে কিছু অ্যাড-অন হবে বলে মনে হয় না।